পিতার কর্তব্য সন্তানকে সময় ও সঙ্গদান-২
০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম

সন্তানের তরবিয়াত ও পরিচর্যা প্রধানত পিতারই কাজ। গঠন-নির্মাণের সূচনা যখন হয় সে বয়সে পিতার শৈথিল্য প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই। সে বয়সে বহুমুখী আকর্ষণ তার গঠন ব্যাহত করতে পারে। ব্যাহত করেই থাকে। তা থেকে সুরক্ষা দিতে হবে পিতাকেই। তা দেয়া না হলে আদরের সন্তান হাতছাড়া হয়ে যাবে। সুরক্ষার অভাবে কত পিতার বুকের ধন একপর্যায়ে তার সুখ হরণের কারণ হয়ে গেছে। চোখ খুলে তাকালেই তা নজরে আসে। আশা ছিল তাদের মানিক-রতন একদিন অনেক বড় হবে। ছিল কত স্বপ্ন। আহা! সেই স্বপ্ন এভাবে মাটি হয়ে গেল! শেষ সান্ত¡না কপালকে দুষে।
কপালের লিখন খ-ানো যায় না ঠিক। কিন্তু কর্মফল খ-াবে কে? সাধ পূরণের চেষ্টা যদি যথাযথ না হয়, তবে অপূরণের দহন তো সইতেই হবে! যথাযথ চেষ্টার প্রধান শর্ত গোড়া থেকে চেষ্টা। যখন কাদামাটির দলা থাকে, সেই সময়কার প্রযতœ। সেই বয়সের সুরক্ষা। তবেই মনের মতন পুতুল গড়ে উঠবে।
‘খোকন প্রীতিভাজনের’ কথাই সুন্দরÑ হাত ধরার বয়সে ধরতে হবে, হাত ধরেই রাখতে হবে। কেবল বিদ্যাশিক্ষার জন্য নয়। হাত ধরতে হবে আরো অনেক শিক্ষার জন্য। আখলাক-চরিত্র শিক্ষার জন্য, আদব-কায়দা শিক্ষার জন্য ও মানবিকতা শিক্ষার জন্য। বিদ্যাশিক্ষার পাশাপাশি এসব শিক্ষাও শেখানো অতীব জরুরি। বালক বয়স থেকেই এর প্রতিটি বিষয় শেখানোর প্রতি মা-বাবাকেই যতœবান হতে হবে।
কেবল শিক্ষক নিয়োগ বা শিক্ষকের হাতে অর্পণ দ্বারাই অভিভাবকের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। অনেক পিতা-মাতাই মনে করেন শিক্ষালয়ে ভর্তি করা বা শিক্ষকের হাতে অর্পণ করার দ্বারাই যথেষ্ট দায়িত্ব পালন হয়ে যায়। বই-খাতা কিনে দেয়া হচ্ছে, কলম-কিতাবের কোনো অভাব রাখা হচ্ছে না, বেতনও ঠিক ঠিক পরিশোধ করা হচ্ছে, তো আর বাকি থাকল কী? বাকি তো থাকলই। আসল জিনিসই বাকি থাকল। আর তা হলো অভিভাবকের প্রযতœ। শিশু যাতে শিক্ষাকে দরকারী মনে করে, যাতে শিক্ষাকে আপন করে নিতে পারে, খেলার মতই ভালোবাসতে পারে, ক্রমান্বয়ে সামনে অগ্রসর হতে পারে এবং ক্ষতিকর কিছুতে লিপ্ত না হয়ে পড়ে তার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া অভিভাবকেরই কাজ।
খুব লম্বা ফিরিস্তি শোনানো হলো। আসলে লম্বা নয় কিছুই। সবটারই সারকথা সময় দেয়া। সন্তানকে সময় দিতে হবে। এটা দেয়া না হলেই ওই লম্বা তালিকা সামনে এসে যায়। তখন তা আসে নেতিবাচকভাবে। এই করা হয়নি, ওই করা হয়নি, এভাবে ‘অনেক কিছু করা হয়নি’-এর অপ্রীতিকর এক তালিকা সামনে এসে দাঁড়ায়।
শিশুকে যদি সময় দেয়া হয় আরো তাৎপর্যপূর্ণভাবে বললে, যদি সঙ্গদান করা হয়, তবে ওইসব দীর্ঘ ফিরিস্তি সামনে আনার দরকারই পড়ে না। ওসব আপনিই হয়ে যায়। কিন্তু দুই শব্দের এ কাজটি আমরা করতে পারছি না। আমরা আমাদের সন্তানদের ‘সঙ্গদান’ করছি না। অনিবার্যভাবেই তা না করার কুফল আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে।
সন্তানদের লেখাপড়া আশানুরূপ হচ্ছে না। যদি হাত ধরার বয়স থেকে আমরা তাদের ঠিকভাবে সঙ্গ দিতাম তবে লেখাপড়ার পথে চলা তাদের জন্য খুব সহজ হয়ে যেত। আমার সঙ্গদান থেকে শক্তি-সাহস পেত, উদ্যম-উদ্দীপনা পেত, অগ্রগামিতার প্রেরণা পেত, বাধা-বিপত্তি ও ক্ষতিকর পারিপার্শ্ব অপসৃত হয়ে যেত, পড়াশোনা আনন্দপূর্ণ হতো এবং হতো কাক্সিক্ষত সবকিছু।
যে সব সন্তান সম্পর্কে তাদের অভিভাবকের আক্ষেপ তারা পড়াশোনা করল না বা করছে না, তাদের পর্যবেক্ষণ করলে আকছার সঙ্গপ্রাপ্তির অভাবই নজরে আসে। তারা অভিভাবকের সঙ্গপ্রাপ্তির বঞ্চনা থেকেই মূলত কাক্সিক্ষত বিদ্যার্জন থেকে বঞ্চিত হয়ে গেছে। সুতরাং সন্তানের প্রতি আক্ষেপ করে লাভ কি, খেদ হওয়া উচিত নিজের প্রতি- আহা, আমার আসল কর্তব্য- সঙ্গদানের অভাবে আজ আমাকে আশাভঙ্গের যাতনা ভোগ করতে হচ্ছে! কথা এখানে শেষ করতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু কিভাবে তা শেষ করা যাবে, যখন এরচেয়ে অনেক বেশি আক্ষেপের জায়গাটা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে!
আক্ষেপ করা হয়, সন্তানের লেখাপড়া তেমন হলো না বলে। লেখাপড়া দুনিয়ার অনেকেরই হয়নি। যাদের হয়নি সব বখে গেছে এমন নয়। মহামানবদের সকলেই বড়-বড় ডিগ্রিধারী ছিলেন কি? আবার সব ডিগ্রিধারীকে মহৎ লোক বলা যাবে? লেখাপড়া ভালো জিনিস সন্দেহ নেই। বরং এটা অনেক মূল্যবান বিষয়। কিন্তু তারচেয়ে আরো বেশি মূল্যবান মানুষের আখলাক-চরিত্র, তার নৈতিকতা। নিশ্চয়ই একজন শিষ্টাচারবোধহীন বিদ্বান অপেক্ষা শিষ্ট-সুবোধ নিরক্ষর অনেক বেশি দামী।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সখিপুরের তিন গৃহবধূর আত্মহত্যা

আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে তারেক রহমানের বিকল্প নাই : হাবিব

বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ জিকবে না: চীনের প্রেসিডেন্ট

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত
৬৪ দলের বিশ্বকাপ চায় কনমেবল

সেদিন প্রাণ নিয়ে ফিরেছিলাম, নয়তো আজ শহিদের তালিকায় থাকতাম

সাভারে আবারও বাস যাত্রীদের জিম্মি করে মোবাইল স্বর্ণালংকার লুট

‘ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে দেশবিরোধী কোন ষড়যন্ত্রই সফল হবে না’

কোটচাঁদপুর কপোতাক্ষ ট্রেন থেকে সাড়ে ৫ কোটি টাকার কোকেন উদ্ধার

ঈর্ষণীয়ভাবে জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে: নূরুল ইসলাম বুলবুল

জামায়াত নেতাদের সাথে সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনারের বৈঠক

লালপুরে দাখিল পরিক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে যুবক গ্রেপ্তার

লিটন-রিশাদ-নাহিদদের লিগ শুরু হচ্ছে আজ

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেত্রী আটক

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজশাহী বিক্ষোভ

মুন্সীগঞ্জে ইসরায়েলী বর্বর আগ্রাসন ও গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ

শীঘ্রই সিরিয়ায় সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করবে সউদী আরব

বিশ্ব মুসলমানের প্রতি ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান- মাওলানা মো. আল-আমিন দেওয়ান

‘বিয়ে ছাড়াও একসঙ্গে থাকতে পারেন প্রাপ্ত বয়স্করা’, বিতর্কিত রায় ভারতে

ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়ার মাতার ইন্তেকাল : দাফন সম্পন্ন